চলতি ২০২৪ সালে রেকর্ড ৮৭৭ কোটি টন কয়লা পোড়ানো হয়েছে বিশ্বজুড়ে, আর বিপুল পরিমাণ এই কয়লার অর্ধেকই ব্যবহার করেছে চীন। এর আগে কোনো একক বছরে এত পরিমাণ কয়লা পোড়ানোর ঘটনা ইতিহাসে ঘটেনি।
প্যারিসভিত্তিক আন্তঃসরকার সংস্থা ইন্টারন্যাশানাল এনার্জি এজেন্সি বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে এ তথ্য।
মানুষের লিখিত ইতিহাস শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ বছর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ২০২৪ সাল। জলবায়ুবিদদের মতে, বিশ্বের উষ্ণতাবৃদ্ধির জন্য অনেকাংশে দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। মূলত তিন ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হয় বিশ্বজুড়ে— গ্যাস, তেল এবং কয়লা। এসবের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য কয়লার দায় সবচেয়ে বেশি। প্রতিদিন পৃথিবীজুড়ে যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ ঘটে, তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আসে কয়লা পোড়ানো থেকে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এবং জলবায়ুবিদরা নিয়মিতই এই মর্মে সতর্কবার্তা দিচ্ছেন যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থা নিয়মিত এ ইস্যুতে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, চুক্তিস্বাক্ষর, প্রচার-প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বজুড়ে, কিন্তু সেসব উদ্যোগ কয়লার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে তেমন ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে না।
আইইএ’র তথ্য অনুযায়ী, একক দেশ হিসেবে ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে কয়লার ব্যবহার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছে চীন। সংস্থাটির বুধবারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যদিও চীন তার বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থাকে বহুমুখী করেছে, সৌরশক্তি এবং বায়ুশক্তির মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধিও করেছে— কিন্তু তা সত্ত্বেও কয়লার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না দেশটি। ২০২৪ সালে রেকর্ড ৪৯০ কোটি টন কয়লা ব্যবহার করেছে চীন। এর আগে কোনো বছর চীনের এত বেশি কয়লা ব্যবহারের তথ্য পাওয়া যায়নি।”
ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো (ইইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য কয়েলার ব্যবহার কমাতে সক্ষম হয়েছে। আইইএ’র বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, গত ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে কয়লার ব্যবহার ইইউ জোটভুক্ত দেশগুলোতে ১২ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৫ শতাংশ কমেছে।
তবে আগামী বছরগুলোতে এই ‘অর্জন’ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র ধরে রাখতে পারবে কি না— তা নিয়ে সংশয়ও জানিয়েছেন জলবায়ুবিদরা।
কারণ, ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি অতীতে একাধিকবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্য-ভাষণে ‘জলবায়ু পরিবর্তন’, ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি’কে পরিবেশবাদীদের ভাঁওতাবাজি বা ধাপ্পাবাজী বলে সরাসরি উল্লেখ করেছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ সংস্থার আশঙ্কা, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতাবৃদ্ধি রোধে বিদায়ী বাইডেন প্রশাসন যেসব প্রতিশ্রুতি ও চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল, ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প কার্যত সেসব প্রতিশ্রুতি-চুক্তিতে পানি ঢেলে দেবেন।
সূত্র : এএফপি/এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড