সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ড যে কোনো সিনেমার কাহিনীকে হার মানাবে। এ খুন এতই ভয়াবহ যে, যত দিন যাচ্ছে ততই সামনে আসছে নতুন নতুন খবর। এবার ডিবি পুলিশ গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে জানিয়েছে, সিলাস্তি রহমান নামে যে তরুণীকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনি আসলে ছিলেন একটি ফাঁদ। খুনের মূলহোতা আকতারুজ্জামান শাহীনের বান্ধবী এই তরুণী। তাকে শাহীন বিভিন্ন সময় বড় অংকের টাকা দিতেন। যখন এমপি আনারকে খুনের পরিকল্পনা করা হয় তখন শাহীনই সিলাস্তিকে ভারতে নিয়ে গিয়েছিলেন।
সিলাস্তিকে বলা হয়েছিল- বাংলাদেশ থেকে একজন ভিআইপি আসবেন তাকে সঙ্গ দিতে হবে। ঘটনার দিন সঞ্জীবায় লাল গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার সময় আনারের সঙ্গে যে তরুণীকে দেখা গেছে সেই তরুণীই ছিলেন সিলাস্তি। তার সঙ্গে আরও দুজন ব্যক্তি ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে তাদের একজন শিমূল ভূঁইয়া ওরফে আমানউল্লাহ সাইদ ও অন্যজন তানভির।
খুনের আগে হুন্ডি ও সোনার ব্যবসার আলোচনার জন্য বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসা থেকে আনারকে ডেকে নেয় ঘাতকরা। বাসা থেকে বের হওয়ার পর সিলাস্তি ও ওই দুজন আনারকে রিসিভ করে সঞ্জীবার একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে যান। সেখানে আগে থেকে প্রস্তুত ছিল জিহাদ ও সিয়াম।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্লোরোফর্ম দিয়ে আনারকে অজ্ঞান করা হয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল আনার চেতনা হারালে তার কিছু আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করবেন। কিন্তু অতিরিক্ত চেতনানাশক প্রয়োগ করায় আনারের আর জ্ঞান ফিরেনি। পরে খুনিরা শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শাহীনের নির্দেশ মতোই আনারকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে মরদেহ গুম করার জন্য কসাই জিয়াদ আনারের দেহকে ৮০ টুকরা করেন। হাড্ডি থেকে মাংস আলাদা করে লাগানো হয় হলুদ। মাথার অংশকে গুঁড়ো করে দেওয়া হয়। পরে ট্রলিতে করে সেগুলো নিয়ে কলকাতার নিউটাউনের ভাঙড় এলাকার কয়েকটি জলাশয়ে ফেলে দেয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুরান ঢাকায় বেড়ে ওঠা বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সিলাস্তি রহমান শাহীনের দীর্ঘদিনের বান্ধবী। আমেরিকা প্রবাসী শাহীনের হাত ধরেই তার অন্ধকার জগতে পা রাখে। শাহীন দেশে এলেই তার সঙ্গে ক্লাবে, ফ্ল্যাটে রাত কাটাতেন সিলাস্তি। অনেকটা বেপরোয়া জীবনযাপন করতেন তিনি।
শুধু দেশে নয় শাহীনের সঙ্গে বিভিন্ন দেশেও যাতায়াত সিলাস্তির। বিশেষ করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে হরহামেশাই শাহীন তাকে নিয়ে যেতো।
আনার হত্যার মিশন বাস্তবায়নের জন্য সিলাস্তিসহ অন্যদের নিয়ে ৩০ এপ্রিল ভারতে যান শাহীন। সিলাস্তিকে বলা হয়েছিল বাংলাদেশ থেকে একজন ভিআইপি আসবে। তাকে সময় দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এজন্য নিউমার্কেট থেকে থেকে অনেক কেনাকাটাও করে দেওয়া হয়েছিল সিলাস্তিকে।
তবে সিলাস্তি তদন্ত সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি সেখানে ছিলেন না। তিনি তখন অন্য একটি কক্ষে ছিলেন।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, ভারতে সোনা চোরাচালানের রুট নিয়ন্ত্রণ করতেন আনার। তার মাধ্যমেই চোরচালানকারীরা বিদেশে সোনা পাচার করতো। এরমধ্যে থেকেই বড় ধরনের কয়েকটি চালানের সোনা আনার আত্মসাৎ করেন। যার আনুমানিক মূল্য ২০০ কোটির মতো। এই সোনার মালিক আকতারুজ্জমান শাহীন। মূলত আত্মসাৎ করা এসব সোনা নিয়ে আনারের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব।
এদিকে আনারের মরদেহ উদ্ধার নিয়ে এখন ধোঁয়াশা কাটছে না। আসামির জবানবন্দি মতে লাশ টুকরো টুকরো করা হয়েছে। কসাই জিহাদকে ভাড়া করে এনে মরদেহ টুকরো করিয়ে জলাশয়ে ফেলে লাশ গুম করা হয়।