ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এই প্রতিবাদের ঝড় মূলত শুরু হয়েছিলো কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর তা টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, উতাহ, ভার্জিনিয়া, নিউ মেক্সিকো, নিউ জার্সি, কানেক্টিকাট ও লুজিয়ানায় ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভের সময় ক্যাম্পাসগুলো থেকে পুলিশ অন্তত এক হাজার জনকে গ্রেফতার করে।
সবশেষ স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টায় নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যামিল্টন হলে অভিযান চালায় পুলিশ। এতে করে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনবিরোধী বিক্ষোভ ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।
মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ভবন হ্যামিল্টন হলের নিয়ন্ত্রণ নেন ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা। তারা ভবনটির ভেতরে অবস্থান নেন। ভবনের প্রবেশপথ অবরুদ্ধ করে রাখেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, হ্যামিল্টন হল থেকে বিক্ষোভকারীদের সরাতে ভবনে প্রবেশ করে নিউইয়র্ক পুলিশ।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ক্রেনের মতো দেখতে বড় ভ্রাম্যমাণ মই বেয়ে জানালা দিয়ে পুলিশ ভবনটিতে প্রবেশ করে। পরে তারা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করে। আটকৃতদের পুলিশ ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয়।
নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ বলছে, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যামিল্টন হল থেকে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যক্তি ও কোম্পানিকে বয়কটের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই প্রচণ্ড ছাত্র বিক্ষোভ চলছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। এরই মধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। শিক্ষার্থীরা তাঁবু খাটিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছিলেন।
কলাম্বিয়ার শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের অনেকে কমলা ও হলুদ রংয়ের ভেস্ট পড়ে বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন।
এদিকে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁবু সরিয়ে নিতে এবং বিক্ষোভ বন্ধ করতে গত সোমবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময়সীমা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। এর জেরে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সাময়িক বহিষ্কার করতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগকে পাঠানো একটি চিঠিতে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট মিনোচে শফিক বলেন, হলের দখল নেওয়ার নেতৃত্বে যারা রয়েছেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়। সেই সঙ্গে তিনি হ্যামিল্টন হলসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য নিউইয়র্ক পুলিশের সাহায্য চেয়েছিলেন।
জানা গেছে, মিনোচে শফিক পুলিশকে কমপক্ষে ১৭ মে পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবস্থান করার জন্য অনুরোধ করেন। এছাড়া বিক্ষোভ যাতে পুনরায় জেগে না ওঠে, সেটা নিশ্চিত করার জন্যও অনুরোধ করেন।
এদিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, বিক্ষোভ হতে হবে শান্তিপূর্ণ। জোর করে ভবন দখল করা শান্তিপূর্ণ না, এটা ভুল।
তবে নিউইয়র্ক শহরের ডেমোক্র্যাট দলীয় কংগ্রেসম্যান জামাল বাউম্যান কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এ অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেছেন। সেখানে পুলিশের উপস্থিতিতে তিনি ক্ষুব্ধ।