জলি আহমেদ…
প্রবাসী বাঙালিদের আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান হলো ফোবানা সম্মেলন। এই সম্মেলনটি এমন এক সময় হলো, যখন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশ নতুন স্বাধীনতা পেয়েছে। স্বাধীনতার সঙ্গে ফোবানার এই সম্মেলনটিও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ প্রবাসীরাও বিভিন্নভাবে ছাত্র আন্দোলনে বড় ভূমিকা রেখেছেন। তাইতো নিউইয়র্কের মেরিয়ট হোটেলে অনুষ্ঠিত সম্মেলনটি আন্দোলনে শহিদদের জন্য উৎসর্গ করা হয়।
৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা। সম্মেলনের আয়োজক সংগঠন হচ্ছে আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এবিসিসিআই)। আর সম্মেলনের টাইটেল স্পন্সর হলো ইউর ড্রিম হোম কেয়ার। এতে সভাপতিত্ব করেন চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ। আর পরিচালনা করেন সদস্য সচিব ফাহাদ সোলায়মান।
ইউর ড্রিম হোম কেয়ারের সিইও ও প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান এম এ আজিজ অনুষ্ঠিত ফোবানা সম্মেলনের প্রশংসা করে বলেন, প্রবাসের মাটিতে বাঙালিদের এমন একটি সম্মেলন সত্যিই অসাধারণ। এই সম্মেলনের মাধ্যমে প্রবাসীদের মাঝে একটি আত্মারবন্ধন তৈরি হয়। দীর্ঘদিন হলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ফোবানা। এটা প্রবাসীদের স্বার্থরক্ষা ও বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। আমি ফোবানার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। একই সঙ্গে প্রবাসী সকল বাঙালিদের প্রতি আমার শুভ কামনা রইলো।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কনভেনর আসিফ বারী টুটুল, প্রধান উপদেষ্টা ডা. মাসুদুর রহমান, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি দেওয়ান এ আজিম জুয়েল, বাংলা পোস্টের সম্পাদক মুনমুন কাসিনা বারী, লায়ন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট রকি আলিয়ান, সাধারণ সম্পাদক জে এফ রাসেল, বিশিষ্ট অ্যাটর্নি মীর মিজানুর রহমান, খলিল বিরিয়ানির খলিলুর রহমান, বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া, সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী, সহ-সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ নওশাদ হোসেন, জেবিএির সাবেক সভাপতি জাকারিয়া মাসুদ জিকো, ডা. চৌধুরী সারওয়ারুল হাসান, ডা. আব্দুস সবুর, মোশাররফ হোসেন সবুজ, জেবিবিএর সাধারণ সম্পাদক তারেক হাসান খান, ডা. বর্ণালী হাসান, শাহাদ হোসেন রাজু, জেড জয়, ভিপি জসীম, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক, রিয়াজ মাহমুদ, ইমরান শাহ রন, বদরুল হক আজাদ, সাইফুর খান হারুণ, দেওয়ান কাওসার, বিলাল চৌধুরী, এটর্নি মঈন চৌধুরী, দুলাল বেহেদু, ওয়াহেদ কাজী এলিন, মোহাম্মদ মহসীন, আব্দুস সবুর, নাফিউল ইসলাম পান্না প্রমুখ।
দ্বিতীয় দিনে শনিবার সম্মেলনের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা, স্টেট অ্যাসেম্বলীওমেন জেসিকা গঞ্জালেস রোহাস, নিউইয়র্ক সিটি মেয়র অফিসের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মীর বাশার।
এছাড়া গ্লোবাল ওয়ার্মিং বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ডা. মাসুদুর রহমান। ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ এবং করণীয়’ বিষয়ক সেমিনারে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক সাঈদ তারেক, বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার ফরহাদ। এই পর্ব পরিচালনা করেন সাংবাদিক রিমন ইসলাম।
তৃতীয় দিনে অনুষ্ঠান উপস্থাপনার সহযোগিতায় ছিলেন মিয়া মোহাম্মদ দুলাল ও জয়।
কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা বলেন, এই সম্মেলনে বাংংলাদেশের কৃষ্টি-কালচার এবং ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়।
এ সময় তিনি বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান ও ভয়াবহ বন্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যায় অনেকে তাদের সব হারিয়েছেন। তাদের সাহায্যে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে কনসাল জেনারেল বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এই সরকারের হাতে এখন রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ। দেশের ক্রান্তিলগ্নে নোবেল লরিয়েটে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বের উন্নতির শিহরে পৌঁছাবেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের প্রতি ফোবানা সম্মেলন উৎসর্গ করে এবিসিসিআই চেয়্যারম্যান গিয়াস আহমেদ বলেন, আমাদের এই ফোবানা সম্মেলনে এবার দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের প্রতি উৎসর্গ করা হলো।
তিনি বলেন, একজন প্রবাসী বাংলাদেশি হিসেবে আমরা চাই বাংলাদেশ ভালো থাকুক। বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকুক, আইনের শাসন থাকুন।
এসময় কনভেনর আসেফ বারী টুটুল সংগঠন থেকে বাংলাদেশে মানুষের পাশে থাকা হবে বলে জানান।
সম্মেলনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল। এতে সংগীত পরিবেশন করেন আঁখি আলমগীর, চন্দন চৌধুরী ও কৃষ্ণা তিথিসহ আরও অনেকে।