আবারো উত্তপ্ত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাস। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ক্যাম্পাসে গভীর রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রবেশের প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বুয়েট। দিনভর চলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো ক্যাম্পাস। ঘোষণা দেয়া হয় অনিদৃষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের। পাশাপাশি ৬ দফা দাবি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। এসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা।
জানা যায়, ২৮ মার্চ রাত ১টার পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারাসহ কর্মীদের একটি বিশাল বহর বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দেয় অসন্তোষ।
পরদিন ২৯ মার্চ আন্দোলনে নেমে পড়েন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। তারা ‘ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা এই বুয়েটে হবে না’, ‘বুয়েট থেকে করব ছাড়া, পলিটিকসে যুক্ত যারা’, এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন। করেন মিছিল।
শিক্ষার্থীরা লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২৮ মার্চ রাত ১টার দিকে বুয়েটে একটি বিশেষ রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের বেশ কজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক দিয়েই ভেতরে ঢুকেছেন। অথচ রাত সাড়ে ১০টার পর নিরাপত্তাজনিত কারণে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদেরই ক্যাম্পাসে ঢোকার অনুমতি নেই, সেখানে রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট বহিরাগত ব্যক্তিদের মধ্যরাতেই বুয়েট ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশ ঘটে। শুধু তারাই নয়, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক বহিরাগত রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে আসতে থাকে। রাত ২টার পর মিছিলের মতো করে বিশাল একটি বহর ফুলের তোড়া নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। সেই জনবহরের সবাই বহিরাগত ছিল এবং তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল।
এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ, এমন একটি ক্যাম্পাসে রাতের আঁধারে এত বড় একটি রাজনৈতিক সমাগম এবং বহিরাগতদের আগমন ক্যাম্পাসের মর্যাদার প্রতি তীব্র অপমানজনক। একই সঙ্গে এটি একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস এবং শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু স্বাভাবিক শিক্ষাপরিবেশের নিরাপত্তার ব্যাপারকে গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তর কোনোভাবেই এই দায় এড়িয়ে যেতে পারে না৷
মধ্যরাতে বুয়েটে বহিরাগত রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের এমন দাপুটে প্রবেশ কর্তৃপক্ষ এবং ডিএসডব্লিউর দৃষ্টির অগোচরে হওয়া অসম্ভব বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা৷
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, ঘটনা ঘটে যাওয়ার দেড় দিন পার হয়ে গেলেও ডিএসডব্লিউর কাছ থেকে ওই ঘটনা সম্পর্কে কোনো ধরনের সদুত্তর পাওয়া যায়নি। ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে তারা প্রবেশের এই অনুমতি কীভাবে কর্তৃপক্ষের থেকে পেয়েছিল, তা এখনো ধোঁয়াশাপূর্ণ এবং সন্দেহজনক। এসব ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটে বর্তমানে চলমান পাঁচটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিপুল সমালোচনার ঝড় ওঠে। তারা তাদের নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি হলো
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে ২৮ মার্চ মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক ২১তম ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বিকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার ও হল বাতিল করতে হবে।
২. ইমতিয়াজের সঙ্গে বুয়েটের বাকি যেসব শিক্ষার্থী জড়িত, তাদের বিভিন্ন মেয়াদে হল ও টার্ম বহিষ্কার করতে হবে।
৩. রাজনীতি সংশ্লিষ্ট বহিরাগত যারা ক্যাম্পাসে ঢুকেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তারা কেন ও কীভাবে প্রবেশের অনুমতি পেলো- এ বিষয়ে সুস্পষ্ট জবাবদিহি বুয়েট প্রশাসনকে দিতে হবে।
৪. ১ ও ২ নম্বর দাবি শনিবার সকাল ৯টার মধ্যে বাস্তবায়ন করা না হলে ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) পদত্যাগ করতে হবে।
৫. ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে বহিরাগতদের প্রবেশের কারণে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এর প্রতিবাদ হিসেবে শনি ও রোববার টার্ম ফাইনালসহ সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করা হবে।
৬. আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো রকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না, এই মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয় বুয়েট ক্যাম্পাসে।