দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। এ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন মালামাল চুরি, গায়েবসহ নানা অনিয়মই যেন এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ নামমাত্র তদন্ত কমিটি করে দোষীদের সাময়িক শাস্তি দিলেও কিছুদিন পর তারা আবার সেই কারবার করে বহাল তবিয়তে থেকে যায়। এবার কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের ডিস্টিলারি বিভাগে ১৩ হাজার ১শত ৯০.৭৫ লিটার ডিএস স্পিরিট (মদ) গায়েব হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা।
কেরু ডিস্টিলারিতে ডিএস স্পিরিট দিয়ে বিলেতি মদ ফরেনলিগারের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ উৎপাদন করা হয়। এতো মালামাল গায়েবের পেছনে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের ডিস্টিলারি বিভাগে বন্ডেড ওয়্যারহাউস (ডিস্টিলারি ভাণ্ডার) ইনচার্জ একেএম মাজেদুর রহমান ওরফে তুফানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তবে এই ঘটনাটি কেরু ডিস্টিলারি বিভাগে জানাজানি হলে অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া এখনো পর্যন্ত শুরু হয়নি।
জানা গেছে, কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের ডিস্টিলারি বিভাগে বন্ডেড ওয়্যারহাউজের সহকারী ইনচার্জ জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমোশন পেয়ে ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পান। এর আগে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের ডিস্টিলারি বিভাগে বন্ডেড ওয়্যারহাউস ইনচার্জ ছিলেন মাজেদুর রহমান ওরফে তুফান।
জাহাঙ্গীর হোসেন কেরুজ কর্তৃপক্ষের নিকট এক লিখিত অভিযোগে বলেন, আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার সময় ডি/এস গোডাউন, ডিএস স্পিরিটের ৩ নম্বর ভ্যাট গোডাউন সরজমিন গভীরতা ১০৯ ইঞ্চি। যার বাস্তবিক মজুত রয়েছে ৩৫ হাজার ৫১২.২৩ লিটার।
কিন্তু হস্তান্তর তালিকায় মজুত রয়েছে ৩৯ হাজার ৭১১.৫৫ লিটার। ৭ নম্বর ভ্যাট গোডাউনে সরজমিন গভীরতা ৫৩ ইঞ্চি। যার বাস্তবিক মজুত রয়েছে ৪ হাজার ৮শ’ ৪.৩০ লিটার। কিন্তু হস্তান্তর তালিকায় মজুত রয়েছে ১৩ হাজার ৭৯৫.৭৩ লিটার। এছাড়া ১০ নম্বর ভ্যাটে ৪ ইঞ্চি মালামাল কম আছে। তিনি ভ্যাট নম্বর ৩ ভ্যাট নম্বর ৭ ও ভ্যাট নম্বর ১০ বাস্তবিক মজুত অনুযায়ী ১৩ হাজার ১৯০.৭৫ লিটারের বেশি মালামাল কম থাকায় আমি দায়িত্ব গ্রহণ করিনি। এ ব্যাপারে আমি গত ২রা মে দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। বিষয়টি কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করেন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।
স্থানীয় শ্রমিকরা বলছেন, সাজেদুর রহমান ওরফে তুফানের অজ্ঞাত কারণে এ বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া এখনো পর্যন্ত শুরু হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে কেরুর এক শ্রমিক নেতা তেলেসমাতি কারবার করে থামিয়ে দিয়েছে বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।
এ ব্যাপারে মাজেদুর রহমান ওরফে তুফান বলেন, ‘জাহাঙ্গীর হোসেন যখন চার্জ দিতে আসে তখন খাতায় ঠিক হয়নি। উনি দায়িত্ব না নিয়ে শ্রীমঙ্গলে বসে আছেন। মালামাল কোন সর্টফট নেই। আমি নিজে এখন ওয়্যারহাউজ চালাচ্ছি। জুনের পরে হিসাব এসে দেখে যাবেন সব ঠিক আছে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন। আর যেটা ওয়্যারহাউজে সর্টেজ থাকে ২-১শ’ লিটার কোনো বিষয় না।
মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ডিস্টিলারি বিভাগের বন্ডেড ওয়্যারহাউজ (ডিস্টিলারি ভাণ্ডার) মালামাল কম হয়েছে এমন তথ্য জানতে পায়। পরে আমাকে জানানো হয়। তবে আমি বিষয়টি অফিসে এসে খতিয়ে দেখবো।