যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি সত্যিকার অর্থেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান চান, সেক্ষেত্রে তার সঙ্গে সমঝোতায় যেতে রাজি আছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বৃহস্পতিবার মস্কোতে আয়োজিত প্রেসিডেন্টের বাৎসরিক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেছেন, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেন বিজয়ী হওয়ার পর গত চার বছরে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ বা বার্তালাপ হয়নি তার এবং তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠকে আগ্রহী।
সংবাদ সম্মেলনে পুতিনকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক হলে ইউক্রেনে যুদ্ধ অবসানের জন্য রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাব তিনি দেবেন কি না। উত্তরে পুতিন বলেন, “যুদ্ধে এই মুহূর্তে আমরা শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছি। এমনকি ২০২২ সালে রুশ সেনারা যখন ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করেছিল, সে সময়ের তুলনায় রাশিয়াও সার্বিকভাবে এখন অনেক শক্তিশালী।”
“তাই আমাদের পক্ষ থেকে (ট্রাম্পকে) নতুন কোনো প্রস্তাব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রস্তাব বরং আসা উচিত কিয়েভ থেকে; কারণ যুদ্ধের প্রতি ইউক্রেনীয়দের সমর্থন কমছে। আমার ধারণা, শিগগিরই এমন সময় আসবে— যখন ইউক্রেনের আর একজন মানুষও যুদ্ধকে সমর্থন করবে না।”
“তো, আমি এটুকু বলতে পারি যে রাশিয়া আলোচনা ও সমঝোতার জন্য প্রস্তুত। এখন প্রশ্ন হলো, অন্যপক্ষ (ইউক্রেন) কি (আলোচনা ও সমঝোতার জন্য) প্রস্তুত?”
বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে পুতিন জানান, ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি সংলাপ শুরুর ক্ষেত্রে মাত্র একটি পূর্বশর্ত রাখতে চায় রাশিয়া, আর তা হলো— দেশটির বৈধ ও নির্বাচিত সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কেবল বৈঠকে বসবে রুশ প্রতিনিধি দল।
“ইউক্রেন যদি সত্যিই শান্তিপূর্ণভাবে যুদ্ধের অবসান চায়, সেক্ষেত্রে আমি বলব যে রুশ প্রতিনিধিরা কেবল ইউক্রেনের নির্বাচিত ও বৈধ সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকেও আমাদের আপত্তি নেই, কিন্তু তার আগে অবশ্যই তাকে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে এবং তাতে জয়ী হতে হবে।”
প্রসঙ্গত, ইউক্রেনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২২ সালে। কিন্তু একাধিকবার সামরিক শাসন ডিক্রি জারির মাধ্যমে এখনও ক্ষমতায় আছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে জেলেনস্কির বক্তব্য, যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো নির্বাচন নয়।
প্রসঙ্গত, ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা পালন না করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের কিয়েভের তদবিরের জেরে কয়েক বছর টানাপোড়েন চলার পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজে এ অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
গত তিন বছরের যুদ্ধে দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, ঝাপোরিজ্জিয়া এবং খেরসন— ইউক্রেনের এই চার প্রদেশের দখল নিয়েছে রুশ বাহিনী। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে চার প্রদেশকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতিও দিয়েছে মস্কো।
এদিকে ওই একই মাসে ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করে কিয়েভ; কিন্তু ন্যাটোর পক্ষ থেকে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয় যে যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত ইউক্রেনকে সদস্যপদ দেওয়া সম্ভব নয়।
এর কিছুদিন পর মস্কোর পক্ষ থেকে কিয়েভকে প্রস্তাব দেওয়া হয় যে যদি ইউক্রেন আনুষ্ঠানিক ও সাংবিধানিকভাবে ক্রিমিয়া, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, ঝাপোরিজ্জিয়া ও খেরসনকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করবে রুশ বাহিনী।
এর পাল্টা জবাবে জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া যদি এই ৫ অঞ্চল ইউক্রেনকে ফিরিয়ে দেয় এবং নিজেদের সেনা প্রত্যাহার করে নেয়, তাহলে তিনি যুদ্ধবিরতির সংলাপ শুরু করতে রাজি আছেন।
স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়ার তার প্রস্তাব মেনে নেয়নি। ফলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এ পর্যন্ত বিরতিও আসেনি।
স্থায়ী যুদ্ধাবসানের পরিবর্তে আপাতত ইউক্রেনে অস্থায়ী বা স্বল্পকালীন বিরতির কোনো পরিকল্পনা রাশিয়ার রয়েছে কিনা— এমন এক প্রশ্নের উত্তরে পুতিন বলেন, “এই যুদ্ধের একমাত্র সমাধান স্থায়ী শান্তিচুক্তি। অস্থায়ী বিরতি কোনো সমাধান নয়।”
সূত্র : রয়টার্স