বছরে বাড়িতে ৮২ কেজি খাবার নষ্ট করেন একজন বাংলাদেশি। যা যুক্তরাস্ট্র, নেদারল্যান্ডস ও জাপানের নাগরিকদের চেয়ে অনেক বেশি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ দশমিক ১০ মিলিয়ন টন খাবার নষ্ট হয়। বাংলাদেশিদের এই খবর অপচয়ের পরিমাণ আগের চেয়ে আরও বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্য অপচয় একটি বিশ্বব্যাপী ট্রাজেডি। বিশ্বজুড়ে অপচয় হওয়া খাবারের কারণে আজ লাখ লাখ মানুষ ক্ষুধার্ত।
জাতিসংঘের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, একজন বাংলাদেশি তার বাড়িতে বছরে আনুমানিক ৮২ কেজি খাবার নষ্ট করেন। অপরদিকে একজন আমেরিকান ৭৩ কেজি, ডাচ ৫৯ কেজি এবং জাপানি ৬০ কেজি খবর নষ্ট করেন। সেই হিসেবে ধনী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে অনেক বেশি খবর নষ্ট হয়।
সবশেষ ২৭ মার্চ প্রকাশিত নাইরোবিভিত্তিক জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) ‘ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স রিপোর্ট ২০২৪’ এ উঠে আসে এসব তথ্য। সমীক্ষায় সহযোগী হিসেবে যুক্ত ছিল ওয়ার্ল্ডওয়াইড রেসপন্সিবল অ্যাক্রেডিটেড প্রোডাকশন (ডাব্লিউআরএপি)।
এর আগে ২০২১ সালের ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স রিপোর্টে বলা হয়েছিল, সেসময় একজন বাংলাদেশি বছরে ৬৫ কেজি খাবার বাড়িতে নষ্ট করেন। ফলে তখন দেশে মোট ১০.৬২ মিলিয়ন টন গৃহস্থালি খাদ্য নষ্ট হয়েছিলো। অর্থাৎ ২০২৪ এ এসে তা আরও বেড়েছে।
প্রতিবেদনে খাবার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যেকোনো দ্রব্য যেটি প্রক্রিয়াজাত, আধা প্রক্রিয়াজাত বা কাঁচা অবস্থায় মানুষ খেতে পারে। এর মধ্যে পানীয় এবং অন্যান্য দ্রব্য যেগুলো খাদ্য তৈরি, প্রস্তুতি বা চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় সেগুলোকেও খাদ্য হিসেবে প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে। আর খাদ্য বর্জ্য হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে মানুষের খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খল থেকে সরিয়ে ফেলা খাবার এবং অখাদ্য অংশকে। অখাদ্য অংশের মধ্যে থাকতে পারে হাড়, ফলের খোসা, পাথর, বিচি ইত্যাদি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু উন্নত দেশে প্রতি বছর একজন ব্যক্তির দ্বারা বাড়িতে খাবার নষ্ট করার পরিমাণ যেমন চীনে ৭৬ কেজি, বেলজিয়ামে ৭১ কেজি, নিউজিল্যান্ডে ৬১ কেজি এবং রাশিয়ায় ৩৩ কেজি।
এছাড়া মালদ্বীপের পরিবারগুলো প্রতি বছর ২০৭ কেজি খাবার নষ্ট করে, যা এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি। তারপরই আছে আফগানিস্তান (১২৭ কেজি), পাকিস্তান (১৩০ কেজি), এবং নেপাল (৯৩ কেজি)।
বাংলাদেশে খাদ্য অপচয়ের বিষয়টি দেখার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। বাংলাদেশের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া জানান, সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া তেমন কিছু তাদের করণীয় নেই।
তিনি বলেন, আমরা ভোক্তা পর্যায়ে কেউ নষ্ট বা মানোত্তীর্ণ খাবার দিলে ব্যবস্থা নিতে পারি। কিন্তু কেউ খাদ্য নষ্ট করলে বা অপচয় করলে আমাদের কিছু করার আছে বলে জানা নেই।