নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘আজকালে’ ইউর ড্রিম হোম কেয়ার নিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করায় এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির মালিক এম এ আজিজকে নিয়ে মানহানিকর ও আপত্তিকর কথা লেখায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার এ বিষয়ে নিউইয়র্কের মামাস পার্টি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রবাসী ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের নির্বাচিত চেয়ারম্যান এম এ আজিজ। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। একই সঙ্গে ‘আজকাল’ পত্রিকায় যেসব বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে আজিজের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ইউর ড্রিম হোম কেয়ারের মিডিয়া পরিচালক জলি আহমেদ। এছাড়া একই প্রতিষ্ঠানের সিইও ফয়সল আজিজ তার বক্তব্যে মিসবাহ আবদীনের মামলা ও তার ভয়ানক প্রতারণার কথা তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে এম এ আজিজ জানান, ইউর ড্রিম হোম কেয়ার নিয়ে মিসবাহ আবদীন ও ফরিদা ইয়াসমীনের করা মামলার বিকৃত বয়ান ও ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে ‘আজকাল’ পত্রিকায়। ‘আজকাল’র প্রকাশক এবং সম্পাদক শাহ নেওয়াজ ইউর ড্রিম হোম কেয়ারের সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এই কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ সোসাইটিকেও হেয়প্রতিপন্ন করতেও দ্বিধাবোধ করেননি তিনি। এসবের মাধ্যমে তিনি কমিউনিটিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২৪ মে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক আজকাল ‘ইউর ড্রিম হোম কেয়ারকে কারণ দর্শাও নোটিশ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রচার করে। পুরো সংবাদটি মিথ্যা, বানোয়াট, মানহানিকর ও বিভ্রান্তিমূলক। রিপোর্ট দেখে মনে হয়েছে সংবাদটি আমার এবং আমার প্রতিষ্ঠান ইউর ড্রিম হোম কেয়ারের বিরুদ্ধে এক ষড়যন্ত্র। এই মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদটি আমার প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। সেই সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্মানহানি হয়েছে। ‘আজকাল’ যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার সম্মানহানিতে নেমেছে তার আরেকটি জ্বলন্ত প্রমাণ গত ৩১ মে ‘আজিজের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ’ শিরোনামে আরেকটি মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ পরিবেশন। সেই রিপোর্টে প্রবাসের মাদার সংগঠন হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটিকেও হেয়প্রতিপন্ন করেছে। বাংলাদেশ সোসাইটি চলে গঠনতান্ত্রিক ভাবে। সেই গঠনতন্ত্রকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মনগড়া, কাল্পনিক সংবাদ পরিবেশন করে চলেছে শাহ নেওয়াজ মালিকানাধিন আজকাল পত্রিকা। তাদের উদ্দেশ্য বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন নয়, এটা আমার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, আজকালের সংবাদে মিসবাহ আবদীন ও ফরিদা ইয়াসমীনের করা আমার ও আমার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এক মামলার বিকৃত বয়ান উপস্থাপন করা হয়েছে। মিসবাহ আবদীন এবং ফরিদা ইয়াসমীন আদালতে যে নিষেধাজ্ঞা চেয়েছেন, তার শুনানিতে আদালত আমাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের দাবি (মিসবাহ- ফরিদা) নাকচ করে দেন। সেই ডকুমেন্ট আমার কাছে রয়েছে। আদালত সত্যের পক্ষে যে রায় দিয়েছেন, তার প্রতি আমি এবং আমার প্রতিষ্ঠান শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু সাপ্তাহিক ‘আজকাল’ আদালতের নিষ্পত্তির বিষয়টি পুরোপুরি এড়িয়ে গেছে এবং উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে আমি এবং আমার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট এবং মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করে কমিউনিটিতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। এ অবস্থায় আমি এবং আমার প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীক স্বার্থে আইনজীবীর দ্বারস্থ হয়েছি। ইতিমধ্যে আমি আমার আইনজীবীর মাধ্যমে ৩০ মে সাপ্তাহিক আজকাল’র প্রকাশক এবং সম্পাদককে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছি। সেই সাথে মানহানির মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ইউর ড্রিম হোম কেয়ার নিয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে এম এ আজিজ বলেন, ২০২২ সালের ৪ আগস্ট আইনজীবীর মাধ্যমে ইউর ড্রিম হোম কেয়ার মিসবাহ আবদীনের কাছ থেকে ক্রয় করি। যখন সেল এগ্রিমেন্ট হয়, তখন তার কাছে আমি জানতে চাই, এই হোম কেয়ারের কোনো লেনদেন আছে কি না। আইআরএস কোনো টাকা পাবে কি না। তখন সে জানায়, আইআরএস কোনো টাকা পাবে না। শুধু এরমধ্যে আমার স্মল বিজনেসের ৬০ হাজার ডলারের লোন আছে, এটা আমি এক মাসের মধ্যে দিয়ে দিব।
‘কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, আইআরএস’র কাছে এই প্রতিষ্ঠানের বকেয়া ৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার। যা মিসবাহ আবেদীন আমার কাছে গোপন করে। পরবর্তীতে আমি এই সব বকেয়া পরিশোধ করি। এসবের স্পষ্ট ডকুমেন্ট আমাদের কাছে রয়েছে।’
আদালতের আদেশের বিষয়ে এম এ আজিজ বলেন, মিসবাহ আদালতে যে দাবি করেছিলেন তার সবগুলোই বাতিল করে দেন আদালত। শুধু আদালত বাড়িটি বিক্রি না করার জন্য অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে আমার প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, সেই নোটিশেরও নিষ্পত্তি হয়। অথচ আজকাল’র প্রকাশক এবং সম্পাদক শাহ নেওয়াজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলা চলছে।
আজিজ জানান, মিসবাহ আবদীন ৩৫ বছর ধরে চেনেন। তিনি তার দীর্ঘদিনের প্রতিবেশি। মিসবাহ তার সাথে যে ধরনের প্রতারণা করেছেন তিনি মামলা করলে পরের দিনেই জেলে যেতেন মিসবাহ। কিন্তু তার পরিবার ও ছেলে মেয়েদের কথা ভেবে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন নাই আজিজ।
মিসবাহ তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছেন সেটিও শাহ নেওয়াজের ইন্ধনেই করেছেন বলে উল্লেখ করেন আজিজ।
এম এ আজিজ বাংলাদেশ সোসাইটির দুই দুইবারের নির্বাচিত সভাপতি। এছাড়া তিনি তিনবারের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান।
এতো দিন ধরে সোসাইটির নেতৃত্বে কীভাবে রয়েছেন- এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আজিজ বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত আমি। যে কোনো প্রয়োজনে আমি প্রবাসী বাঙালিদের পাশে দাঁড়িয়েছি এটা সবাই জানে। এই সোসাইটির ইতিহাসে আমিই প্রথম দুবারের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলাম। আগেও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলাম। এখন ১২ বছর হয়ে গেল আমি ট্রাস্টি বোর্ডের তিন তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। বোর্ডের সদস্যরা আমার কার্যক্রম দেখে ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছেন। ভোটে নির্বাচিত হয়েই আমি এসেছি। কারণ বাংলাদেশ সোসাইটির একটা গঠনতন্ত্র আছে। এক ব্যক্তি (শাহ নেওয়াজ) তিনিও ভাইস প্রেসিডেন্টের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। অথচ তার জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার অবস্থা। আর আমি প্রবাসী বাঙালি ভাইদের ভোটে নির্বাচিত হই।
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে আজিজ বলেন, আমি বলেছি এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবো। তবে শাহ নেওয়াজ যেভাবে আমার বিরুদ্ধে নিউজ করে অপপ্রচার করেছেন। সেইভাবে বড় করে হেডলাইন দিয়ে আমার প্রবাসী বাঙালি ভাইদের কাছে তাকে মাফ চাইতে হবে। তিনি যে মিথ্যাচার করেছেন তার স্বীকার করতে হবে। তাহলে আমি তাকে হয়তো ছাড় দিতে পারি। এবং, আমি আরও পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমি ও আমার ছেলে ফয়সাল আজিজ যদি জীবিত থাকি, তাহলে ইউর ড্রিম হোম কেয়ার কখনো বন্ধ হবে না ইনশাআল্লাহ।
সংবাদপত্রকে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও প্রতিহিংসার হাতিয়ার না বানানোরও আহবান জানান মোহাম্মদ আজিজ। তিনি বলেন, ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা বানোয়াট সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে বন্ধ করা যায় না। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের ফলে দেশ, জাতি ও সমাজ উপকৃত হয়।
প্রবাসের সংবাদকর্মীরাও তাদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে জনকল্যাণমূলক কাজে এগিয়ে আসবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, অসামাজিক ও মর্যাদাহীন ব্যক্তিরা সমাজে নোংরামি ছড়ানো স্বাভাবিক, কিন্তু যখন কেউ কোনো সংবাদপত্রের সম্পাদক ও প্রকাশকের দায়িত্ব পালন করেন, তখন ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে অপপ্রচার চালানো মোটেই কাম্য নয়। এরফলে সংবাদপত্রের ওপর মানুষের যে আস্থা রয়েছে তা হারিয়ে ফেলবে।